তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর । একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, দ্বিতীয় অধ্যায় । Class 11, 2nd semester Bengali, Second Chapter

একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, দ্বিতীয় অধ্যায় তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 1st semester Bengali, Second Chapter । WBCHSE । Telena pota abiskar - Premendra Mitra

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র নিয়ে। আশাকরি তোমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের এই তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র অধ্যায়টি থেকে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে তা কমন পেয়ে যাবে। আমরা এখানে একাদশ শ্রেণীর, দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র এর SAQ, শূন্যস্থান পূরণ, এক কথায় উত্তর দাও, Descriptive, ব্যাখ্যা মুলক প্রশ্নোত্তর , সংক্ষিপ্ত নোট এগুলি দিয়েছি। এর পরেও তোমাদের এই তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র অধ্যায়টি থেকে কোন অসুবিধা থাকলে, তোমরা আমাদের টেলিগ্রাম, হোয়াটসাপ , ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারো । 
তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর । একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, দ্বিতীয় অধ্যায় । Class 11, 2nd semester Bengali, Second Chapter

তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র
অনধিক ১৫০ শব্দে উত্তর দাও। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫

প্রশ্ন ১ 

"আপনার দুই বন্ধু তখন দুই কারণে অচেতন।"দুই বন্ধুর অচেতনতার সুযোগে গল্পের কথক যে- অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল, তার বর্ণনা দাও। ৫


উত্তর- 
■ ভগ্ন অট্টালিকায় কথকের অভিজ্ঞতা: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে দীর্ঘ পথশ্রমে ক্লান্ত নায়ক ও তার দুই বন্ধু তেলেনাপোতায় পৌঁছে এক ভগ্নপ্রায় জীর্ণ অট্টালিকায় আশ্রয় নেয়। সেখানে প্রবেশ করামাত্রই একজন নিদ্রাবিলাসী সঙ্গী মেঝের ওপর শতরঞ্জি বিছিয়ে ঘুমোনোর আয়োজন করে এবং আর-একজন পানপাত্রে নিজেকে নিমজ্জিত করে দেয়। এই অবসরে নায়ক ধীরে ধীরে শয্যা ত্যাগ করে ছাদের উদ্দেশে পা বাড়ায়। টর্চ হাতে ভগ্নপ্রায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে প্রতি মুহূর্তে ইট-বালির খসে পড়ার সঙ্গে নিজের পতন বাঁচিয়ে শেষপর্যন্ত ছাদে হাজির হয়। তবুও কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ চাঁদের আলোয় সব কিছুই অপরূপ, মোহময় মনে হয়। উপলব্ধি হয়-এই মৃত্যু-সুষুপ্তিমগ্ন মায়াপুরীর কোনো গোপন প্রকোষ্ঠে বন্দিনি রাজকুমারী সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি পাশে নিয়ে যুগান্তের গাঢ় নিদ্রায় অচেতন : হয়ে আছে। আবার সেই মুহূর্তে অদূরে সংকীর্ণ রাস্তার ওপারে আপাত ভগ্নস্তূপ মনে-হওয়া একটি জানলায় আলোর একটি ক্ষীণ রেখা দেখা যায়। সহসা সেই রেখাকে আড়াল করা একটি রহস্যময় ছায়ামূর্তিকেও দেখা যায়। একসময় সব কিছুই চোখের ভুল বলে ধারণা হয়। শেষপর্যন্ত মনে হয়, এই সবই ধ্বংসপুরীর অতল নিদ্রা থেকে উঠে-আসা ক্ষণিকের এক স্বপ্ন-বুদবুদ। তারপর অতি সাবধানে নীচে নেমে কোনো-এক সময় দুই বন্ধুর পাশে জায়গা করে নিয়ে নায়ক ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রশ্ন ২ 

"দুর্বোধ্য ভাষায় আপনাকে বিদ্রুপ করবে।"-কে, কাকে, কেন বিদ্রুপ করছে? এই প্রসঙ্গে আর যেসব প্রাণীর কথা আছে, সেগুলির ক্রিয়াকলাপ উল্লেখ করো। ৩+২=৫


উত্তর:- 
■ বিদ্রুপের কারণ: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প থেকে সংকলিত উদ্ধৃত বাক্যে একটি মাছরাঙা পাখি, মৎস্য-আরাধনায় রত নবাগত মৎস্যশিকারি গল্পের নায়ককে বিদ্রূপ করবে। তার বিদ্রুপ করার কারণ, নায়কের মাছ ধরতে না পারা। যেভাবে সাজিয়ে ষোড়শোপচারে সে মাছ ধরতে ব্যস্ত, তাতে মাছ ধরা পড়ার কথা। কিন্তু কিছুতেই তা হচ্ছে না। অন্যদিকে মাছরাঙা পাখিটি অনায়াসে ঝুঁকে-পড়া একটা বাঁশের ডগা থেকে ক্ষণে ক্ষণে পুকুরের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছশিকার করতে সক্ষম হয়। এ কারণেই তার সার্থক শিকারের উল্লাসে এবং নায়কের মাছ ধরতে অপারগতার কারণে সে দুর্বোধ্য ভাষায় বিদ্রুপ করবে।

■ বিভিন্ন প্রাণীর ক্রিয়াকলাপ: 
এই প্রসঙ্গে দুটি ফড়িং, একটি সাপ ও একটি ঘুঘু পাখির কথা গল্পকার এখানে বলেছেন। এদের মধ্যে ফড়িং দুটি পাল্লা দিয়ে তাদের কাচের মতো পাতলা পাখা নেড়ে গল্পের নায়কের মাছ ধরার ফাতনার ওপর বসবার চেষ্টা করে। সাপটি ভাঙা ঘাটের কোনো অজানা ফাটল থেকে বেরিয়ে ধীরে অচঞ্চল গতিতে সাঁতরে পুকুরের অন্যপাড়ে গিয়ে ওঠে। আর ঘুঘু পাখির উদাস করা ডাক থেকে থেকে নায়ককে আনমনা করে দেয়।


প্রশ্ন ৩ 

'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অবলম্বনে বাস থেকে তিনটি চরিত্র যেখানে নামল, সেই জায়গাটির বর্ণনা দাও। ৫


উত্তর:- 
■ পূর্বকথা: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের তিন চরিত্র মঙ্গলবারে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। কোনো এক বিকেলের পড়ন্ত রোদে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাসে উঠে গরমে ঘামে-ধুলোয় চটচটে শরীর নিয়ে ঘণ্টা দুই পরে হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে নেমে পড়ে।

■ জলা-জায়গাটির বর্ণনা: 
বাস থেকে নামার পর তারা সামনে একটি নীচু জলার মতো জায়গা দেখতে পায়। এই জলা-জায়গার ওপর দিয়েই বাসটি চলে গিয়ে অন্য পারে পথের বাঁকে পৌঁছেই অদৃশ্য হয়ে যায়। সূর্য না ডুবলেও ঘন জঙ্গলের কারণে চারদিক নিকষ কালো অন্ধকার নেমে এসেছে। জনমানবহীন সেই এলাকায় পাখির ডাক পর্যন্ত শুনতে পাওয়া যায় না। ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে একটি কাদাজলের নালা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই নালাটিও কিছুদূর গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে জঙ্গলের আড়ালে। জায়গাটি মশায় ভরতি। সেখানকার অন্ধকার এত ঘনায়মান যে পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেও কারোর মুখ স্পষ্ট দেখা যাবে না। ধীরে ধীরে মশাদের গুনগুন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সময় নালায় হারিয়ে যাওয়া জায়গাটা থেকে এক শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। যেন 'বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে'। কিছুক্ষণ পর ওই আবছা অন্ধকারের মধ্যে একটি ক্ষীণ আলো দুলতে দেখা যায়। একসময় সেই গভীর জঙ্গলের ভিতর থেকে নালা দিয়ে ধীর গতিতে এক গোরুর গাড়িকে আসতে দেখা যায়।


প্রশ্ন ৪ 

"আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না।”-আসল উদ্দেশ্য কী? সেই উদ্দেশ্যকে আসল বলা হয়েছে কেন এবং তা কি পূরণ হয়েছিল? ২+৩=৫


উত্তর:-
■ আসল উদ্দেশ্য: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে উদ্দেশ্য' হিসেবে গল্পের প্রধান চরিত্র তথা নায়কের মৎস্যশিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

■ উদ্দেশ্য আসল হওয়ার কারণ: 
তেলেনাপোতা বেড়ানোর জায়গা হিসেবে মন্দ নয়। কারণ সেখানে বিরাজমান এক-দেড়শো বছরের প্রাচীন বাড়ির ঐতিহ্য। তেলেনাপোতার গল্পের নায়কের মনে হয়েছে যেন রূপকথার কোনো মায়াপুরী। কিন্তু নায়কের তেলেনাপোতার মোহে জড়িয়ে পড়লে হবে না, এটা তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল মৎস্যশিকার।

■ উদ্দেশ্য অপূর্ণ: 
তেলেনাপোতায় এসে নায়কের আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়নি। সেখানে পৌঁছে পরের দিন সকালে সে মাছ ধরার সমস্ত উপকরণ নিয়ে শ্যাওলা ঢাকা পুকুরের ভাঙা ঘাটের ধারে বসে পড়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়লেও একটি মাছও তার বঁড়শিতে ধরা দেয়নি। এমনকি একটি মাছ বঁড়শিতে গাঁথার উপক্রম করেও লেখকের অন্যমনস্কতার সুযোগে পালিয়ে যায়। শেষপর্যন্ত তাকে মৎস্যশিকারের উপকরণ নিয়ে ব্যর্থ মনোরথে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হয়।

প্রশ্ন ৫ 

মম "জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনো কুাটিকা- চ্ছন্ন স্মৃতিলোকে এসে পড়েছেন বলে ধারণা হবে।" -কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে? গল্পের নায়কের এরকম ধারণার কারণ ব্যাখ্যা করো। ২+৩=৫


উত্তর:-  
■ প্রসঙ্গ: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে মহানগরী থেকে মাত্র ত্রিশ মাইল দূরে স্থিত ব্যাঘ্রসংকুল দেশ এই তেলেনাপোতা। সেখানে যাওয়ার যানবাহন ও পদ্ধতি বড়ো বিচিত্র। বড়ো রাস্তা থেকে গোরুর গাড়ি ছাড়া যানবাহন নেই। তাতে আবার স্থান কুলান-ঠাসাঠাসি অবস্থা। পথও বিচিত্র রহস্যময়। আকাশে বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদ। গোরুর গাড়িতে বসে মাথা তুলে তাকাতেই গায়ে শিহরন জাগে। বাহাপ্রকৃতির এই রহস্যময় অবস্থা ও তার প্রভাব প্রসঙ্গে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলা হয়েছে।

■ প্রশ্নোদ্ভূত ধারণার কারণ: 
মহানগরী থেকে তিরিশ মাইল দূরে ব্যাঘ্রসংকুল রাস্তায় গোবুর গাড়িতে চেপে তিন বন্ধু তেলেনাপোতার উদ্দেশে চলেছে। ইতিমধ্যে গাড়িটি বিশাল একটি মাঠ পার হয়ে গিয়েছে। আকাশে কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আর তারই স্তিমিত আলোয় আবছা বিশাল মৌন সব অট্টালিকা গাড়ির দু-পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ হিসেবে কোথাও একটা থাম, দেউড়ির খিলান কিংবা মন্দিরের ভগ্নাংশ মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে। নায়কের মনে হবে, রাত বুঝি এখানে ফুরোয় না। এইসব দেখতে দেখতে কথক গোরুর গাড়ির মধ্যে থেকে মাথা তুলে বসে অদ্ভুত এক শিহরন সারা দেহে অনুভব করে। এই অনুভূতির কারণেই এতদিনকার চেনা-পরিচিত জগৎ তাঁর কাছে অজ্ঞাত ও অবজ্ঞেয় বলে মনে হয়। আর সেইসঙ্গে তার ধারণা হয় তারা 'জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনো কুদ্ধটিকাচ্ছন্ন স্মৃতিলোকে এসে পড়েছেন।'


প্রশ্ন ৬ 

'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। ৫


উত্তর:- 
■ ভূমিকা: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের কথকই হল গল্পের নায়ক। গল্পটি যেমন বিভিন্ন পথে বাঁক নিয়েছে, সেই সঙ্গে সঙ্গে নায়ক কখনও সক্রিয় হয়েছে কখনও পীড়িত হয়েছে। গল্পে কথকচরিত্রের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রবৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

■ গভীর অনুভূতিপ্রবণতা গল্পে কথকের গভীর অনুভূতি তেলেনাপোতা ছাড়িয়ে যামিনী পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। কথকের অনুভূতিতে তেলেনাপোতা জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কুয়াশাচ্ছন্ন স্মৃতিলোক হয়ে উঠেছে, তেমনই যামিনীর দৃষ্টি, চোখমুখের অব্যক্ত অভিব্যক্তিও সে সুনিপুণভাবে উপলব্ধি করেছে।

■ রোমান্টিক ভাববিলাস: 
কথক শহুরে জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত কিন্তু গ্রামীণ জীবনের রোমান্টিকতায় আবেগ-তাড়িত হয়ে তেলেনাপোতায় পাড়ি দেয়। মৎস্যশিকারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, গ্রামীণ পরিবেশে অবগাহন কথকের রোমান্টিক ভাববিলাসের পরিচয় বহন করেছে।

■ আবেগবিহ্বলতা: 
রোমান্টিক ও অনুভূতিপ্রবণ নায়ক যামিনীর মতো সেবাপরায়ণ যুবতি আর তার অন্ধ বৃদ্ধ মায়ের কথা শুনে আবেগবিহ্বল হয়ে ওঠে।

■ প্রতিশ্রুতিপালনে ব্যর্থ: 
কথক আবেগতাড়িত হয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিলেও নগরজীবনের বাস্তববোধ নায়ককে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে দেয়নি। লেখক তার সত্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

এভাবেই গল্পের কথক চরিত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচ্য গল্পে প্রকাশ পেয়েছে।


প্রশ্ন ৭

"তাহলে হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন।”- তেলেনাপোতা আবিষ্কারের শর্তগুলি উল্লেখ করো। গল্পের নায়ক কীভাবে তেলেনাপোতা আবিষ্কার সমর্থ হয়েছিল লেখো। ৩+২=৫


উত্তর:- 
■ আবিষ্কারের শর্ত: 
'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি সার্থক ও বলিষ্ঠ সৃষ্টি। গল্পকার তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কিছু শর্তও রেখেছেন-

✍️ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য শনি বা মঙ্গলবারকে বেছে নিতে হবে।

✍️ তেলেনাপোতা আবিষ্কারে যাওয়ার জন্য দুজন বন্ধু বা সঙ্গী থাকা উচিত।

✍️ মাছ ধরবার ব্যাপারে বিশাল কোনো অভিজ্ঞতা থাকার দরকার নেই। মাছ ধরার ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী হতে হবে।

✍️ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য বিকেলবেলার পড়ন্ত রোদে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটা বাসে গিয়ে উঠতে হবে।

✍️ ভাদ্রমাসের গরমে রাস্তার ঝাঁকুনি খেয়ে ঘামে-ধুলোয় চটচটে দেহ নিয়ে ঘণ্টা দুয়েক যাত্রার পর আচমকা রাস্তার মাঝখানে কোনো একটি নীচু জলার মতো জায়গার ধারে নামতে হবে।

এইসব শর্তসাপেক্ষে যে-কেউ কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে তেলেনাপোতা আবিষ্কারে সমর্থ হতে পারে।

■ নায়কের তেলেনাপোতা আবিষ্কার: 
প্রথমে ঘণ্টা দু-একের বাসযাত্রা ও পরে গোরুর গাড়ির সাহায্যে তেলেনাপোতার ধ্বংসোন্মুখ প্রাসাদে পৌঁছে বাসযোগ্য ঘরে অবস্থান করে গল্পের নায়ক ওই রাতেই ভাঙাচোরা সিঁড়ি বেয়ে ছাতে ওঠে এবং অনতিদূরের বাড়ির এক জানলায় রহস্যময় ছায়ামূর্তি দেখতে পায়। পরদিন মাছ ধরতে গিয়ে অকৃতকার্যের লজ্জা নিয়ে ঘরে ফিরে এলে সবার সামনে তাকে অপ্রস্তুত হতে হয়। এর পর মনের তীব্র আবেগে নায়ক যামিনীর মায়ের কাছে বহু প্রতীক্ষিত অতি প্রিয়জন হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তেলেনাপোতা থেকে শহরে ফিরে আসার পর ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মন থেকে ধীরে ধীরে আবিষ্কৃত তেলেনাপোতার স্মৃতি হারিয়ে যেতে থাকে।

প্রশ্ন ৮ 

"প্রতীক্ষাও আপনাদের ব্যর্থ হবে না।”-কোথায়, কোন্ পরিস্থিতিতে প্রতীক্ষা করার কথা বলা আছে? প্রতীক্ষা-পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দাও। ২+৩=৫


উত্তর:-  
■ প্রতীক্ষার পরিস্থিতি: তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য বেরিয়ে-পড়া গল্পের তিন বন্ধুর প্রতীক্ষা করার কথা বলা আছে। তারা যাত্রাপথে হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে এক নীচু জলার কাছে নেমে পড়ে। জলার ওপর দিয়ে তাদের বাসটিও অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘন জঙ্গলের কারণে চারদিকে অন্ধকার, সেইসঙ্গে একটি ভিজে ভ্যাপসা আবহাওয়ায় তাদের মন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তার ওপর রয়েছে মশার আক্রমণ এবং অন্ধকারে পরস্পরের মুখ দেখতে না-পাওয়ার কারণে অস্বস্তিবোধ। গল্পকথক এমন পরিস্থিতিতেই সেই নালার পাশে প্রতীক্ষা করার কথাই বলেছে।

প্রতীক্ষা-পরবর্তী ঘটনা প্রতীক্ষার অবসান ঘটার পর প্রথমেই আবছা অন্ধকারের মধ্যে একটি ক্ষীণ আলোর দোলন দেখা যায়। তারপর দেখা যায় একটি গোরুর গাড়ি জঙ্গলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে। কালবিলম্ব না করে এই গাড়িতেই উঠতে হয়। স্থান অকুলান, অথচ অন্য উপায় নেই দেখে কোনোরকমে হাত-পা-মাথা গুঁজে চরম অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়। গোরুর গাড়িটি গাড়োয়ানের বাঘ তাড়ানোর ক্যানেস্তারার শব্দ কানে ভেসে আসবে।

যাত্রাপথে কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের আলোয় রাস্তার দু- পাশের বিশাল মৌন প্রহরীরা সরে যায়। কোথাও প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, থাম, খিলান, মন্দিরের ভগ্নাংশকে মহাকালের সাক্ষ্যরূপে দেখা যায়। এভাবেই কল্পলোককে আশ্রয় করে পৌঁছোতে হয় তেলেনাপোতায়, যেখানে রাতের হয়তো কোনো শেষ নেই ও যেখানে অনন্ত স্তব্ধতা বিরাজমান। সবশেষে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছোনো সম্ভব হয়। দু-তিনবার মোড় ঘুরে গোরুর গাড়ি একটি জীর্ণ অট্টালিকার সামনে তার যাত্রা শেষ করে।


প্রশ্ন ৯ 

'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অবলম্বনে গোরুর গাড়িতে করে যাওয়ার অভিনব অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। ৫


উত্তর:- 
■ গোরুর গাড়িতে অভিজ্ঞতা: 
তেলেনাপোতা যাওয়ার যাত্রীরা বাস থেকে নেমে প্রতীক্ষা করতে করতে তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠে। আবছা অন্ধকারে প্রথমে একটি ক্ষীণ আলো দুলতে দেখা যায় ও কাদাজলের নালা শেষ হয়ে যাওয়ার স্থান থেকে একটি গোরুর গাড়িকে আসতে দেখা যায়। গাড়িতে ওঠার পর যাত্রা শুরু হয়। ফেরার পথে নালায় ফিরে গাড়ি চলতে শুরু করে। অন্ধকারের অভেদ্য দেয়াল ভেদ করে গোরুর গাড়িটি অবিচলিতভাবে ধীর গতিতে এগিয়ে চলে।

গোরুর গাড়ির পরিসর সংকীর্ণ গাড়ি চলতে শুরু করায় হাত-পা-মাথার যথোচিত সংস্থান বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনায় তাদের বেশ অস্বস্তি বোধ হতে থাকে। বন্ধুদের মধ্যে 'অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ হয়। তারপর ধীরে ধীরে চারপাশে গাঢ় অন্ধকার নেমে আসে। সঙ্গে চেতনার জগতও লুপ্ত হয়। এ যেন পরিচিত পৃথিবীর বাইরের অনুভূতিহীন কুয়াশাময় জগৎ। সময়ও সেখানে স্তব্ব।

গাড়োয়ান গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে চিতাবাঘ তাড়াতে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে চলে। আকাশে কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদ দেখা যায়। প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ হিসেবে মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রত্যাশায় নির্বাকভাবে দাঁড়িয়ে থাকা থাম, দেউড়ির খিলান কিংবা কোনো মন্দিরের ভগ্নাংশ মৌন প্রহরীর মতো সরে যেতে থাকে গাড়ির দু-পাশ দিয়ে। এই আশ্চর্য প্রাকৃতিক পরিবেশ যাত্রীদের মনে শিহরন জাগিয়ে তোলে। মনে হয়, কোনো স্মৃতিলোক বুঝি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। রাত এখানে যেন ফুরোয় না। এরপর গোরুর গাড়িটি দু-তিনবার মোড় ঘুরে এক জীর্ণ অট্টালিকার সামনে এসে থামে।


প্রশ্ন  ১০ 

"আমি জানতাম, তুই না এসে পারবি না বাবা।"- বক্তা কে? তার বলা কথাগুলি নিজের ভাষায় লেখো। এ প্রসঙ্গে যামিনীকে কেন্দ্র করে নায়কের উপলব্ধি লেখো। ২+৩=৫


উত্তর:- 
■ বক্তা: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প থেকে উদ্ধৃত এই উক্তির বক্তা হল যামিনীর মা।

বক্তার বক্তব্য যামিনীকে নিয়ে এ প্রসঙ্গে তিনি নিরঞ্জনের উদ্দেশে যেসব কথা বলেছেন-তিনি নিরঞ্জনের আসার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন বলেই এমনি করে এই প্রেতপুরী পাহারা দিয়ে দিন গুনছেন। যামিনীর মা বলেন যে যামিনীকে বিয়ে করলে সে সুখী হবে। যামিনী মেয়ে হয়েও এই পুরুষ-শূন্য দেশে সে দ্বৈত ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন যে, যামিনীকে সে যেন গ্রহণ করে, তার প্রতিশ্রুতি না- পেলে তিনি মরেও শান্তি পাবেন না।

■ নায়কের উপলব্ধি: 
যামিনীর মায়ের বলা কথার সময় নায়ক যামিনী সম্পর্কে নানান বিষয় উপলব্ধি করে। অবশ্য তার এই উপলব্ধির বিষয় তার পূর্বের ভাবনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত। এ-কারণে বৃদ্ধের কথা বলা ও তাঁর হাঁফানোর সময় চকিতে সে যামিনীর ওপর দৃষ্টি ফেলে আর উপলব্ধি করে, বাইরের কঠিন মুখোশের অন্তরালে তার মনও যেন ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে। নায়কের মনে হতে থাকে-যামিনী তার চারপাশে, মনের চতুর্দিকে এতকাল ধরে গভীর হতাশার উপাদানে যে-সুদৃঢ় শপথের ভিত্তি তৈরি করে মায়ের সেবা করার ইচ্ছেকে প্রবল করে রেখেছিল তা ধীরে ধীরে আলগা হতে থাকে। ভাগ্য ও জীবনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে সেও যেন বৃহত্তর জগতের টান অনুভব করে।

এ ছাড়াও, নিরঞ্জনের ভূমিকায় নায়কের আর পালিয়ে না যাওয়ার কথা শুনে যামিনী যে স্তম্ভিত ও বিস্মিত হয়েছিল, সেটিও সে উপলব্ধি করে।


প্রশ্ন ১১ 

"মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেবার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে।"-মহাকালের স্বরূপ উল্লেখ করে গল্পকার যেখানকার বর্ণনা দিয়েছেন, সে-স্থানের বিবরণ দাও। ৫


উত্তর:- 
■ মহাকালের স্বরূপ: 
প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে 'মহাকাল' হল অনবচ্ছিন্ন সময়। আবার শিবের রুদ্ররূপও মহাকাল হিসেবে চিহ্নিত। সময়ের অভিঘাতে মানুষ জীবনের দুঃখযন্ত্রণা, ব্যথা-বেদনা ভুলে যায়। সময়ের সঙ্গে আগত সুখও একসময় সময়ের আবর্তেই শেষ হয়। সময়ই হল ব্যক্তিমানুষের সুখদুঃখ, ভালোমন্দের নিয়ন্ত্রক। সময়ের আবর্তেই মানুষ নতুন উপলব্ধি লাভ করে, নতুন মূল্যবোধে জীবনকে উদ্দীপ্ত করে। 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পেও মহাকালের সেই স্বরূপ উপলব্ধি করা যায়। দেখা যায়- ধ্বংসোম্মুখ প্রাসাদের অন্তিম থাম, দেউড়ির খিলান কিংবা মন্দিরের ভগ্নাংশ। এগুলি সবই এক সমৃদ্ধ সময়ের স্মৃতিচিহ্ন। লেখক পরোক্ষে বলতে চান, আমাদের কৃষিনির্ভর সভ্যতা একসময় সমৃদ্ধ ছিল। গ্রামগুলো সুখ-সমৃদ্ধি খুঁজে পেয়েছিল। মহাকালের নিয়মে যান্ত্রিক নগর-সভ্যতা নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে, আর গ্রাম পড়ে রয়েছে অন্ধকারে, অবহেলায়। আজও রোমান্টিক কল্পনায় যে-সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা-সমৃদ্ধ গ্রামের কথা আমরা জানি, বাস্তব গ্রামের চিত্র তার বিপরীত।

■ স্থানের বিবরণ: 
মহাকালের সাক্ষ্যরূপকে স্পষ্ট করতে গল্পকার যেখানকার কথা বলেছেন, সে-স্থানটি মহানগরী থেকে মাত্র মাইল তিরিশ দূরে। যাত্রাপথের আবছা অন্ধকারে কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত স্নান চাঁদ দেখা দেয়। সেইখানে মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যর্থ আশায় যারা নিশ্চুপ- নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারা হল-প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, কোথাও একটা থাম, কোথাও একটা দেউড়ির খিলান, কোথাও কোনো মন্দিরের ভগ্নাংশ। স্থানটি যেন জীবন্ত পৃথিবীর অতীত কোনো কুয়াশাচ্ছন্ন স্মৃতিলোকমাত্র।


প্রশ্ন ১২ 

"আপনি যেন অনুভব করতে পারবেন।"- কোন বিষয় অনুভূত হবে, তা উল্লেখ করে এই অনুভবের কারণ ব্যাখ্যা করো। ৫


উত্তর:- 
■ যা অনুভূত হবে: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের এই উদ্ধৃতিতে গল্পকার যে-বিষয়টি অনুভূত হওয়ার কথা বলেছেন, তা হল নায়কের বন্ধু মণির বিমূঢ়তা ও তার পাশে একটি স্থাণুর মতো মেয়ে যামিনীর মুখের স্তম্ভিত বিস্ময়ের উপস্থিতি। আসলে নায়ক যখন যামিনীর মায়ের কাছে মণিকে বাধা দিয়ে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় করে অকপটে জানায়, সে আর পালাবে না, তখনই তারা এমন বিমূঢ়, স্তম্ভিত ও বিস্মিত হয়ে পড়েছিল।

নায়কের এইরকম অনুভবের প্রধানতম কারণ হল, আকস্মিকতা। আর এই আকস্মিকতা উভয়দিক দিয়েই সংঘটিত হয়েছিল। যামিনী বা মণি কেউই এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না-নায়ক তো নয়ই। বরং ঘটনাক্রমে একটা অনভিপ্রেত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাত্র।

■ অনুভবের কারণ: 
কল্পনাপ্রবণ নায়ক পারিপার্শ্বিক প্রভাবে যামিনীর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে পড়ে। তারপর যামিনীর মাকে দেখে, তার অন্তিমদশার কথা বিবেচনা করে, সে আর নিজেকে সংযত রাখতে পারে না। সে রোমান্টিক আবেগে এই পরিবেশেরই একজন হয়ে ওঠে। তার ওপর শীর্ণ কঙ্কালসার মূর্তির পাশে স্থগিত-যৌবনা যামিনীকে নিশ্চল থাকতে দেখে নায়ক আর নিজের কাঠিন্য ধরে রাখতে পারেনি। তাই যামিনীর মা যখন নিরঞ্জন ভেবে উপস্থিত নায়ককে বলেন, "অভাগী মাসিকে এতদিনে মনে পড়ল ... কিছুতেই যে নিশ্চিন্তি হয়ে মরতে পারছিলাম না। এবার তো আর অমন করে পালাবি না?" তখন নায়কের মনে হয় কেউ যেন দুঃখিনী মায়ের দুঃখমোচনের জন্য তাকেই দায়িত্ব দিল। আর তার ফলেই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উক্ত অনুভূতির সৃষ্টি হয়।


প্রশ্ন ১৩ 

"আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।”-কে, কাকে বলেছে কথাটি? সত্যিই কি তার 'কথার নড়চড়' হয়নি? ২+৩=৫


উত্তর:-
■ বক্তা-শ্রোতা: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা গল্প 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' থেকে প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে। তেলেনাপোতা আবিষ্কারে যাওয়া তিন বন্ধুর মধ্যে নায়কোচিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিটি যামিনীর অন্ধ হয়ে যাওয়া মৃত্যুপথযাত্রী মাকে কথাটি বলেছে।

■ প্রতিশ্রুতিভঙ্গ: 
তেলেনাপোতা থেকে শহরে ফেরার পর কয়েকটি দিন সেখানকার স্মৃতি নায়কের মনে উজ্জ্বল থাকে। দিন গড়ায়, একটু একটু করে সেই স্মৃতি ঝাপসা হতে থাকে। তারপর যেদিন আলোকোজ্জ্বল রাজপথ থেকে সমস্ত বাধা কাটিয়ে আবার সেই তেলেনাপোতা যাওয়ার জন্য নায়ক প্রস্তুত হয়, সেদিনই ম্যালেরিয়ার কাঁপুনিতে তাকে বিছানা নিতে হয়। মাথায় যন্ত্রণা ও জ্বরের প্রাবল্যে ডাক্তার এলে বোঝা যায়, তেলেনাপোতার মশার কামড়েই এই দুর্ভোগ। ফলে দীর্ঘদিন জ্বরে ভোগা ছাড়া উপায় নেই। তারপর রোগ একসময় সারে, কিন্তু শরীর দুর্বল- তেলেনাপোতায় যাওয়ার ধকলও কম নয়। সুতরাং, সবল শরীর পেতে আরও কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে হয়। আর এখানেই কথা নড়চড় হওয়ার ইঙ্গিত মেলে। শেষপর্যন্ত দেখা যায়, প্রশ্নোদ্ভূত বক্তার দেওয়া কথারও খেলাপ হয়। তেলেনাপোতা ও সেখানকার মানুষদেরকে মনে হয়, দুর্বল মুহূর্তের কুয়াশার কল্পনা মাত্র। ক্ষণিকের আবিষ্কৃত তেলেনাপোতা চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে গল্পকথকের প্রতিশ্রুতির অপমৃত্যু ঘটায়।


প্রশ্ন ১৪ 

"আপনাকে কৌতূহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে।"-কেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কৌতূহলী হল? এ প্রসঙ্গে আর কী জানা যায়? ২+৩=৫


উত্তর:- 
■ উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কৌতূহলের কারণ: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের আলোচ্য কথাটি গল্পের কথক তথা নায়ক সম্পর্কে বলা হয়েছে। কথককে যামিনীর পরিচয় জানতেই হবে কারণ সে ফিরে আসার আগেই তার মৎস্যশিকারের ব্যর্থতার কথা যামিনী ইতিমধ্যে বন্ধুদের কাছে ফাঁস করে দিয়েছে। পুকুরঘাটে সাক্ষাৎ-হওয়া মেয়েটির নাম যে যামিনী, সে-কথাটি নায়কের জানার কথা নয়। যখন ঘরে ফিরে এসে সে সব কিছু বুঝতে পারে, তখনই তার মনে যামিনীর সম্পর্কে কৌতূহল জেগে ওঠে।

■ প্রাসঙ্গিক তথ্য: 
এ প্রসঙ্গে আর যা জানা যায় তা হল-যামিনী গল্পকথকের পানরসিক বন্ধু মণির দূরসম্পর্কের জ্ঞাতিস্থানীয়া। সেইসঙ্গে এও শোনা যায়, সেদিনের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা যামিনীদের বাড়িতেই করা হয়েছে। যামিনীই খাবার পরিবেশন করছে। আয়োজন যৎসামান্য হলেও যামিনীর মধ্যে কোনো আড়ষ্টতা নেই। কথক এও উপলব্ধি করেন, এই জনহীন, পরিত্যক্ত বিস্মৃত লোকালয়ের সব মূকবেদনা যেন যামিনীর মুখে গভীর ছায়া ফেলেছে। তার চোখের দৃষ্টি যেন গভীর এক ক্লান্তির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে রয়েছে। একদিন যেন সে নিজেই এই জীর্ণ ভগ্নস্তূপের মধ্যে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। কথকের এই প্রাসঙ্গিক উপলব্ধি যামিনীকে এক অন্য মাত্রা দান করেছে।


প্রশ্ন ১৫ 

"কে, নিরঞ্জন এলি?"-নিরঞ্জন কে? কোন্ পরিস্থিতিতে গল্পের নায়ক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? ২+৩=৫


উত্তর:- 
■ নিরঞ্জনের পরিচয়: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প থেকে নেওয়া এই উদ্ধৃতিটির নিরঞ্জন হল যামিনীর মায়ের দূরসম্পর্কের এক বোনপো বা বোনের ছেলে। এর সঙ্গে ছেলেবেলায় যামিনীর বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক হয়েছিল।

■ নায়কের নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া: 
যামিনীদের বাড়িতে গল্পের নায়কদের দুপুরে খাওয়ার আমন্ত্রণ হয়। এক সময় নাছোড়বান্দা যামিনী ও তার মায়ের কারণেই নায়ককে নিরঞ্জন সাজতে হয় এবং অজগরপুরীর বুড়িকে আশ্বস্ত করতে মণিদার ভূমিকা কম নয়। জানা যায়, বছর চারেক আগেও নিরঞ্জন এসে যামিনীর মাকে এই বলে আশ্বস্ত করে যায় যে, বিদেশ থেকে ফিরে এসে সে যামিনীকে বিয়ে করবে। কিন্তু সে আদৌ বিদেশে যায়নি বরং নাছোড়বান্দা বুড়িকে সে ধাপ্পা দিয়ে চলে গিয়েছে। এমন ঘুটেকুডুনির মেয়েকে উদ্ধার করতে তার কোনো দায় নেই। কিন্তু এ কথা বুড়িকে বলার উপায় নেই। বললে তিনি বিশ্বাসও করবেন না। আর যদি বিশ্বাস করেনও, তবে দুঃখে, হতাশায় তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। আর মণি সেই পাতকের ভাগী হতে রাজি নয়। যামিনী নিজেও নিরঞ্জনের ব্যাপারে সব জেনেও মাকে কিছু বলতে পারে না। অনূঢ়া মেয়েকে রেখে তিনি নিশ্চিন্তে মরতেও পারছেন না। বুড়ির ধারণা মিথ্যা-এ কথা বলতে যাওয়ার মুহূর্তেই গল্পের নায়ক মণিকে বাধা দিয়ে নিজেই নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ - হয়। বলে, "না মাসিমা, আর পালাব না।" বস্তুত, জনমানবশূন্য দেশে বিধবা বৃদ্ধা ও তার মেয়ে যামিনীর দুর্দশা সাময়িকভাবে হলেও গল্পের নায়কের মনকে সিক্ত করেছিল। এই কারণেই তৎকালীন পরিস্থিতিতে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল।

প্রশ্ন ১৬ 

অযামিনীর চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। ৫


■ ভূমিকা:- 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের অন্যতম আকষর্ণীয় চরিত্রটি হল যামিনী। তার চেহারায় নিদারুণ দৈন্যের ছাপ। অসামান্য এই নারী চরিত্রের বেশ কিছু চরিত্র্যবৈশিষ্ট্য গল্পে ফুটে উঠেছে।

■ সেবাপরায়ণতা: 
গল্পে যামিনীর সেবাপরায়ণতা লক্ষ করা যায়, অন্ধ অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের প্রতি আন্তরিক যত্ন এবং কথক ও তার দুই বন্ধুকে খাওয়ার আমন্ত্রণ ও স্নেহময়ীরূপে পরিবেশনের ঘটনায়।

■ ধৈর্যশীলতা: 
যামিনী তেলেনাপোতার মতো গণ্ডগ্রামে জরাজীর্ণ নির্জন বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে বাঁচিয়ে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, নিরঞ্জনের নির্মম প্রতারণা তার মনে ঠাঁই পায়নি।

■ মনের সুকোমলতা: 
নিরঞ্জনকে ভালোবেসে ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখে নির্মমভাবে প্রতারিত হয়েছে। নিদারুণ দারিদ্র্য তাকে কশাঘাত করেছে। তবুও তার হৃদয়ের প্রেমের মুকুল ঝরে যায়নি। তার শুভ্র স্নিগ্ধ হাসি কথককে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

■ সতর্কতায় নিষ্ঠা: 
যামিনী জানত, নিরঞ্জন তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আর তার জীবনে ফিরবে না। এই গভীর সত্যটি সে কোনোদিনও তার অন্ধ বৃদ্ধা মুমূর্ষু মাকে জানতে দেয়নি। এই বিষয়টি সম্পর্কে সে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দিন অতিবাহিত করত।

■ সপ্রতিভতা: 
যামিনী চরিত্রের কথায় ও ব্যবহারে কোনোরূপ লজ্জার প্রকাশ চোখে পড়ে না। কথক যখন ভাঙা পুকুরের ঘাটে বসে মাছ ধরায় নিবিষ্ট হয়ে পড়েছিল, তখন কথকের বঁড়শির ফাতনায় টান পড়ায় যামিনী বলে উঠেছিল- "বসে আছেন কেন? টান দিন।"

সুতরাং শ্মশানপুরী তেলেনাপোতার প্রাণস্বরূপা, ধৈর্যশীলা, সেবাপরায়ণা যামিনী চরিত্রটি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়।


প্রশ্ন ১৭ 

"তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ কী? একে লেখক 'আবিষ্কার' বলেছেন কেন? ২+৩=৫


উত্তর:- 
■ তেলেনাপোতা যাত্রার কারণ: 
প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অনুসারে তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ মূলত ছুটি কাটানো। কাজেকর্মে প্রাত্যহিক মানুষের ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠার পর গ্রামে গিয়ে জলাশয়ে মাছ ধরা, নিজের মতো আলস্যে সময় যাপন করাই তেলেনাপোতায় যাওয়ার কারণ।

■ 'আবিষ্কার' বলার কারণ: 
'আবিষ্কার' শব্দের দুটি অর্থ ইংরেজিতে পাওয়া যায়- 'Discovery' ও 'Invention' 'Discovery' বলতে বোঝায় যা কিছু ছিল তা অনুধাবন করে বের করা। আর 'Invention' হল যা বাস্তবে এখনও পর্যন্ত নেই তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করা ও তাতে সাফল্য লাভ। গল্পের তেলেনাপোতা আপাত প্রত্যক্ষগোচর হলেও শেষপর্যন্ত আমরা উপলব্ধি করি, তার অবস্থান মানুষের মনের মধ্যে। অপ্রত্যক্ষ তেলেনাপোতা খোঁজার মধ্যে আমরা প্রধানত Invention-এর বৈশিষ্ট্য পাই। দু-একদিন গ্রামে বাস করায় স্মৃতিগুলি আমাদের কাছে অন্যতর জীবনের স্বাদ হিসেবে সুন্দর মনে হয়। কিন্তু যারা প্রতিদিন সেই জীবনে অসংখ্য না-পাওয়া, দারিদ্র্য, রোগ, অবহেলা নিয়ে জীবনযাপন করে, তাদের কাছে সে-জীবন সুখের নয়। জীবনসংগ্রামকে বিলাসিতা বিলাসিতা সঠিক নয়। তাই লেখক তেলেনাপোতা অভিযানে পাঠককেও সঙ্গী করে নেন এবং রোমান্টিক ভ্রমণের শেষে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে জীবনের বাস্তবতাকে স্মরণে আনেন। গ্রামের রহস্যাবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্ধকারাচ্ছন্ন জনমানব বর্জিত, ভগ্নপ্রায় জীর্ণ অট্টালিকা, ভগ্ন সোপান, দরজা-জানালার করুণ দশা, ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ- এসবই শহুরে মানুষের কাছে অচেনা। এই অচেনা জগৎটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে বলেই লেখক একে 'আবিষ্কার' বলেছেন।


  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার দ্বিতীয় অধ্যায় SAQ
  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা নতুন সিলেবাস দ্বিতীয় সেমিস্টার 
  • ক্লাস 11 বাংলা অধ্যায় 2 প্রশ্ন উত্তর
  • Class 11 Bengali New syllabus in bengali west bengal board
  • Class 11 2nd semester Bengali New syllabus WB


একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, দ্বিতীয় অধ্যায়, তেলেনাপোতা আবিষ্কার - প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 2nd semester, Second Chapter Telena pota abiskar - Premendra Mitra Questions and Answers | Class XI, Semester II, Bengali, Second Chapter Questions and Answers 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!