ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর । একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, তৃতীয় অধ্যায় । Class 11, 2nd semester Bengali, Third Chapter

একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, তৃতীয় অধ্যায় ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 1st semester Bengali, Third Chapter । WBCHSE । Vab Sommilon - Biddapoti

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের তৃতীয় অধ্যায় ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি নিয়ে। আশাকরি তোমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের এই ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি অধ্যায়টি থেকে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে তা কমন পেয়ে যাবে। আমরা এখানে একাদশ শ্রেণীর, দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা বিষয়ের তৃতীয় অধ্যায় ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি এর SAQ, শূন্যস্থান পূরণ, এক কথায় উত্তর দাও, Descriptive, ব্যাখ্যা মুলক প্রশ্নোত্তর , সংক্ষিপ্ত নোট এগুলি দিয়েছি। এর পরেও তোমাদের এই ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি অধ্যায়টি থেকে কোন অসুবিধা থাকলে, তোমরা আমাদের টেলিগ্রাম, হোয়াটসাপ , ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারো । 

ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর । একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, তৃতীয় অধ্যায় । Class 11, 2nd semester Bengali, Third Chapter

ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর
অনধিক ১৫০ শব্দে উত্তর:-  দাও। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫

প্রশ্ন ১ 

"আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।"-কোন্ প্রসঙ্গে শ্রীমতী রাধিকা এই উক্তি করেছেন? শ্রীরাধিকার কৃষ্ণপ্রেমের নিবিড়তা এখানে কতখানি প্রকাশ পেয়েছে লেখো। ২+৩=৫


উত্তর:-  
■ আত্মতৃপ্তির অনুভূতি: 
মৈথিল কোকিল কবি বিদ্যাপতির 'ভাব সম্মিলন' কবিতায় শ্রীমতী রাধিকা তাঁর মানসমন্দিরের কল্পরাজ্যে প্রিয়তম মাধবকে পেয়ে আনন্দে হয়েছেন। সীমা-পরিসীমাহীন সুখের অধিকারী হয়েছেন। এতটাই সুখ পেয়েছেন যে, কেউ যদি তাঁকে আঁচল ভরে অগাধ ধনরত্ন দান করে তাঁর প্রিয়তম মাধবকে চান, তবুও তিনি মাধবকে কাছছাড়া করবেন না। সে কথাই তিনি প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে বলেছেন।

■ প্রেমের নিবিড়তা : 
কৃষ্ণকে হারিয়ে রাধার যে মনোবেদনা, সেই মনোবেদনার মধ্যে কৃষ্ণকে রাধা আরও নিবিড় করে অনুভব করেছেন। তাঁর প্রথম মিলনের সলজ্জ আত্মপ্রকাশ নয়, অভিসারের দুঃসাহস নয়, মান-অভিমানের লীলা নয়, বিরহের সান্ত্বনাহীন বেদনা নয়, ভাব সম্মিলনেই যে প্রেমের পরিপূর্ণতা এখানে তারই প্রকাশ ঘটেছে। অর্থাৎ বিদ্যাপতির রাধাকে কৃষ্ণবিরহের সমস্ত ব্যথা সয়ে প্রেমের মূল্য দিতে হয়েছে। বিরহের পটভূমিকাতে তাই রাধার ভাব সম্মিলনের পদগুলি এত বেদনা মাধুরী মিশ্রিত করুণ ও কোমল। শ্রীরাধা চিরবিরহের অগমপারে নির্বাসিতা। তবু তিনি বাসনালোকে মিলনের উল্লাসকে তিল তিল করে জমিয়ে রেখেছেন। কৃষ্ণের প্রতি রাধার প্রেমের নিবিড়তা অকল্পনীয়।


প্রশ্ন ২ 

গীতিকবিতার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে 'ভাব সম্মিলন' কবিতাটিকে সার্থক গীতিকবিতা বলা যায় কি না-তা সংক্ষেপে লেখো। ৫


উত্তর:- 
সংজ্ঞা: 
গীতিকবিতা হল সেই কবিতা যাতে কবির ব্যক্তিগত সুতীব্র অনুভূতি ও ভাবাবেগ প্রকাশ পায় এবং যা কল্পনা সৌন্দর্য ও সংগীতের মিলনে রমণীয় রসমূর্তি লাভ করে। বঙ্কিমচন্দ্র গীতিকবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, "বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটন মাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য"।

■ বৈশিষ্ট্য: 
গীতিকার কয়েকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল- গীতিকবিতা হবে সাবলীল গতিসম্পন্ন, সংগীত-মুখরতা এবং নিটোল স্বল্পাকৃতির অবয়বসম্পন্ন। এতে থাকবে গভীর অনুভূতি ও আবেগব্যাকুলতা। এই সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যের নিরিখে বিদ্যাপতির 'ভাব সম্মিলন' কবিতাটি বিচার্য।

■ সার্থকতা বিচার: 
দীর্ঘ বিরহের পর শ্রীমতী রাধিকা তাঁর হৃদয়-বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মানসমিলনের সুখানুভূতিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি সখীকে তাঁর সেই মিলনের সুখানুভূতিকে আবেগপ্লুতভাবে অকপটে বলেছেন- বহুদিন পর প্রিয়তমের সঙ্গে মিলনে আজ তাঁর সর্বশরীর আনন্দে পুলকিত হচ্ছে। পাপী চাঁদের আলো তাঁকে যত দুঃখ দিয়েছে-আজ তিনি প্রিয়তমের সঙ্গে মিলনে তত সুখ অনুভব করেছেন। কোনো কিছুর বিনিময়ে তিনি প্রিয়তম কৃষ্ণকে সঙ্গছাড়া করে দূর দেশে পাঠাবেন না। কবি বিদ্যাপতি সাবলীল গতিময়তায় এক নিটোল স্বল্পাকৃত অবয়বে শ্রীমতী রাধার মনের কৃষ্ণকেন্দ্রিক অনুভূতিকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন, যা হয়ে উঠেছে সার্থক গীতিকবিতা।

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাপতির পদকে গীতিকবিতার আখ্যায় ভূষিত করে বলেছিলেন, "যাহাকে আমরা গীতিকাব্য বলিয়া থাকি, অর্থাৎ যাহা একটুখানির মধ্যে একটিমাত্র ভাবের বিকাশ....।" এই বিচারেও বিদ্যাপতির 'ভাব সম্মিলন' পদটি সার্থক কবিতার পর্যায়ভুক্ত। এখানেও প্রিয়তম কৃষ্ণের সঙ্গসুখজনিত একটিমাত্র ভাবের প্রকাশ নিটোলভাবে সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন।

প্রশ্ন ৩ 

শ্রীমতী রাধিকার জীবনে কৃষ্ণের অপরিহার্যতা বোঝাতে কবি কী কী উপমা ব্যবহার করেছেন? উপমাগুলি ব্যবহারের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ২+৩=৫


উত্তর:-  
■ উপমা প্রয়োগ: 
কবি বিদ্যাপতি তাঁর 'ভাব সম্মিলন' কবিতায় শ্রীমতী রাধিকার জীবনে কৃষ্ণের অপরিহার্যতা বোঝাতে চারটি যথার্থ উপমা ব্যবহার করেছেন। শীতকালে চাদর যেমন একান্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ, গ্রীষ্মকালে প্রয়োজন বাতাস, ছাতা ছাড়া যেমন চলা যায় না, একইভাবে নৌকা ছাড়া নদী পার হওয়াও অসম্ভব। কৃষ্ণের সঙ্গে রাধিকা এই চারটি প্রয়োজনীয় বিষয়ের মতোই অচ্ছেদ্য সম্পর্কে সম্পর্কিত।

■ উপমা ব্যবহারের তাৎপর্য: 
রাধার নয়নপদ্মের পাপড়ি প্লাবিত করে যে অশ্রু নিশিদিন ঝরেছে, কোনো- এক মধুর মিলনের কল্পনায় সেই অশ্রুকে নয়নপদ্মে বেধে তার উপর আনন্দের আলোকসম্পাত করেছেন কবি। চারটি পরিচিত উপমার ব্যবহার করে বিদ্যাপতি 'প্রিয়তম' বিষয়টিকে সুন্দরভাবে প্রতিফলিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। শীতের চাদর, বর্ষাকালের ছাতা, গ্রীষ্মের বাতাস, দরিয়ার নৌকা একান্তভাবেই প্রয়োজনীয় বিষয়, তেমনি কৃষ্ণ শ্রীমতী রাধার কাছে শীতের চাদর, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা এবং দরিয়ার নৌকা। একমাত্র কৃষ্ণের আশ্রয়ে তিনি একান্তভাবে নিশ্চিন্ত। উপমা অলংকার ব্যবহার করে রাধা তাঁর প্রিয়তমকে যথার্থভাবে সর্বত্র বিকশিত করে দিয়েছেন। রাধার প্রেম পত্র- পুষ্প-পল্লবে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন ৪ 

এমুহ 'ভাব সম্মিলন' কাকে বলে? আলোচ্য পদটিতে রাধার আনন্দের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো। [সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন] ২+৩=৫


উত্তর:-  
সংজ্ঞা: 
শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন পরিত্যাগ করে মথুরা গমন করলে 'হা-কৃষ্ণ', 'হা-কৃষ্ণ' করে শ্রীমতী রাধিকা হৃদয়ে তীব্র বেদনা ও যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েছেন। শেষে শ্রীকৃষ্ণের ধ্যানে তন্ময় হয়ে ভাবরাজ্যে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। মানস বৃন্দাবনে এই অপ্রাকৃত মিলনের নাম 'ভাব সম্মিলন'।

■ আনন্দের রূপচিত্র: 
আলোচ্য পদে শ্রীমতী রাধিকার - কৃষ্ণসঙ্গ সুখজনিত আনন্দের রূপচিত্রকে কবি বিদ্যাপতি অসাধারণ কাব্যিক ছন্দে পাঠক সমীপে তুলে ধরেছেন। দীর্ঘ বিরহের পর শ্রীমতী রাধিকা কল্পনায় আপন দেহমন্দিরে কৃষ্ণকে পেয়ে মিলনের আনন্দে আত্মহারা। সখীকে বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই। প্রিয়তমের মুখদর্শনে রাধিকা আজ চরম সুখ উপলব্ধি করেছেন, তাঁর - সর্বশরীর আনন্দে পুলকিত হচ্ছে। পাপী চন্দ্রকিরণ তাঁকে এ যাবৎ যত দুঃখ দিয়েছে, আজ তিনি প্রিয়তমের সঙ্গে মিলনে তত সুখ অনুভব করেছেন। কোনো কিছুর বিনিময়ে তিনি প্রিয়তম কৃষ্ণকে সঙ্গছাড়া করে দূর দেশে পাঠাবেন না। তাঁর কণ্ঠ থেকে আমরা শুনি-"আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।। তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।” অর্থাৎ কেউ যদি আঁচল ভরে মহারত্ন দান করে কৃষ্ণকে চান তাতেও তিনি মহারত্নের লোভে প্রাণধন কৃষ্ণকে কাছছাড়া করবেন না। কৃষ্ণই তাঁর জীবনের সব। কৃষ্ণ তাঁর কাছে শীতের চাদর, বর্ষাকালের ছাতা, গ্রীষ্মের বাতাস ও দরিয়ার নৌকাতুল্য। কৃষ্ণকে পেয়ে শ্রীমতী রাধিকা তাঁর পরিতৃপ্তির আনন্দকে মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, কবি বিদ্যাপতি শ্রীমতী রাধিকার এই আনন্দকে ব্রজবুলি ভাষার মাধ্যমে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন।

প্রশ্ন ৫ 

"চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।” -কার, কোন্ মন্দিরে মাধব কীভাবে উপস্থিত হয়েছেন? মাধবের উপস্থিতিতে বক্তার কী প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়, তা সংক্ষেপে লেখো। ২+৩=৫


উত্তর:-
কৃষ্ণের আগমন: অভিনব জয়দেব কবি বিদ্যাপতির লেখা 'ভাব সম্মিলন' কবিতায় শ্রীমতী রাধিকার দেহমন্দিরে কল্পনায় মাধব শ্রীকৃষ্ণ এসে উপস্থিত হয়েছেন।

■ আত্মতৃপ্তির প্রকাশ বৃন্দাবনে শ্রীমতী রাধিকাকে রেখে মাধব শ্রীকৃয় মথুরায় চলে গেলে শ্রীরাধা কৃষ্ণবিরহে একান্ত কাতর হয়ে পড়েন। 'হা-কৃষ্ণ, হা-কৃষ্ণ' করে হতাশার অতল তলে নিমজ্জিত হন। কৃষ্ণ বিনে সমগ্র জগৎ তমসাবৃত হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। শুভ্র চন্দ্রকিরণেও তিনি অসীম দুঃখ- যন্ত্রণা অনুভব করেন। চন্দ্রালোকের মাধুর্যতা মানুষকে মুগ্ধ করে, মহা উৎফুল্লতায় মানুষ নানা সুখস্বপ্ন দেখে; কিন্তু শ্রীমতী রাধিকার কাছে চন্দ্রকিরণের মাধুর্য বিষাদের করুণ সুর বয়ে আনে। এই বিষাদ ও বিরহের আবেশে কল্পনার মাধ্যমে শ্রীরাধা তাঁর দেহমন্দিরে মানস কল্পনায় মাধবের সঙ্গে মিলিত হয়ে সীমাহীন আনন্দের অধিকারী হয়েছেন। সখীকে সেই আত্মতৃপ্তিজনিত আনন্দের অনুভূতি অকপটে জানিয়েছেন শ্রীরাধা। সখীকে তিনি বলেছেন, তাঁর প্রিয়তম মাধব তথা শ্রীকৃষ্ণ চিরদিনের জন্য তাঁর দেহমন্দিরে অবস্থান করেছেন। এ তাঁর জীবনে এক চরম প্রাপ্তি। গভীর দুঃখ বা বিরহের দহনেও শ্রীমতী রাধিকার দেহচেতনা স্তিমিত হয়নি, মিলনের প্রত্যাশায় তা আরও উদ্‌গ্রীব হয়েছিল। কল্পনায় সেই মিলন পরিপূর্ণতায় তিনি আনন্দসাগরে অবগাহন করেছেন।

প্রশ্ন ৬ 

" ....তত সুখ ভেল।"-'তত সুখ' বলতে কার, কোন্ সুখের কথা বলা হয়েছে? 'তত সুখ'-এর অনুভূতি সংক্ষেপে নিজের ভাষায় লেখো। ২+৩=৫


উত্তর:-
■ রাধিকার আত্মতৃপ্তি: 
চৈতন্য পূর্ববর্তী বৈয়ব পদকর্তা বিদ্যাপতির লেখা 'ভাব সম্মিলন' কবিতায় শ্রীমতী রাধিকা তাঁর দেহমন্দিরে মানস কল্পনায় প্রিয়তম মাধবের সঙ্গে মিলিত হয়ে অসীম সুখের অধিকারী হয়েছেন। দীর্ঘ গ্রীষ্মের পর বর্ষার বারিধারায় যেমন চারপাশ রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত হয়ে ওঠে, দীর্ঘ বিরহের পর প্রিয় মিলনে রাধিকা ততটাই আনন্দিত হয়েছেন।

■ অসীম সুখের অধিকারী:-
 একদা শ্রীমতী রাধিকা তাঁর প্রিয়তম মাধবকে হারিয়ে তীব্র দুঃখ-যন্ত্রণার অগ্নিতাপে দগ্ধ হয়েছেন। কৃষ্ণ ছাড়া সমস্ত জগৎসংসার তাঁর কাছে অন্ধকারময় রূপে দেখা দেয়। তিনি মনোলোকে কৃষুধ্যানে নিমগ্ন হন। চাঁদের আলো সৌন্দর্যের উপকরণ, চাঁদের আলো মানুষের মনোলোকে সুখের ঢেউ তোলে। কিন্তু প্রাণধন কৃষ্ণ শ্রীমতী রাধিকার কাছে না-থাকায় সৌন্দর্যের চাঁদের আলো তাঁর কাছে বিষাদের সুর বয়ে আনে। চাঁদকে তিনি 'পাপী' বলে তিরস্কার করেন। তাঁর মনে হয় চাঁদ শুভ্র কিরণের দ্বারা তাঁর মনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ বিরহের তীব্রতায় ভাবের ঘোরে কিংবা কল্পনায় মানস বৃন্দাবনে কৃষ্ণের সঙ্গসুখ অনুভব করে তিনি ঠিক ততোটাই সুখের অধিকারী হয়েছেন। কবি বিদ্যাপতি শ্রীমতী রাধিকার মনের এই আনন্দানুভূতিকেই ভাষা, সুর ও ছন্দমাধুর্যে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।

প্রশ্ন ৭ 
'ভাব সম্মিলন' কবিতাটির কাহিনি বিশ্লেষণ করে নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। ৫


উত্তর:- 
■ নামকরণ রীতি: 
সাহিত্যবস্তুর নামকরণ সাহিত্য আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক; কারণ সাহিত্যের মর্মবস্তুর ব্যাখ্যায় নামকরণ অনেকক্ষেত্রেই সহায়কসূত্র হিসেবে কাজ করে। এই নামকরণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে-চরিত্রকেন্দ্রিক, কোনো বিশেষ স্থানকেন্দ্রিক কিংবা কাহিনির ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। কবি বিদ্যাপতির লেখা 'ভাব সম্মিলন' কবিতাটির নামকরণ হয়েছে কবিতার কাহিনির ব্যঞ্জনাধর্মী হিসেবে।

■ নামকরণকারী: 
বৈয়ব পদাবলির একটি বিশেষ পর্যায় হল 'ভাব সম্মিলন'। সেই 'ভাব সম্মিলন' পর্যায়ের অন্তর্গত হল 'কি কহব রে সখী' কবিতাটি। কবিতাটির নামকরণ করেছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সদস্যদের সংকলনকারগণ 'ভাব সম্মিলন' নামে।

■ কাহিনি: 
দীর্ঘ অদর্শনের পর শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মানস- মিলনে শ্রীমতী রাধিকা আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি সখীকে তাঁর সেই মিলনের সুখানুভূতির কথা অকপটে বলেছেন। প্রিয়তম কৃষ্ণ আজ তাঁর দেহমন্দিরে চিরকালের জন্য বিরাজ করছেন। পাপী চাঁদের আলো তাঁকে যত দুঃখ দিয়েছে আজ তিনি প্রিয়তমের সঙ্গে মিলনে তত সুখ অনুভব করেছেন। কোনো কিছুর বিনিময়ে তিনি তাঁর প্রিয়তমকে কাছ ছাড়া করে দূর দেশে পাঠাবেন না।

■ সার্থকতা: 
'ভাব সম্মিলন' হল ভাবরাজ্যে প্রিয়তমের সঙ্গে মিলন। আমাদের আলোচ্য 'ভাব সম্মিলন' কবিতাতেও শ্রীমতী রাধিকা বাস্তবে বৃন্দাবনে কোনো কুঞ্জে নয়, ভাবলোকে বৃন্দাবন লীলায় রূপমাঝারে অঙ্গ লাভ করে মিলন ভাবনায় পুলকিত হয়েছেন। কল্পনায় প্রিয়তম কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তাই কবিতাটির 'ভাব সম্মিলন' নামটি যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।

প্রশ্ন ৮ 

 "তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।"-কে, কোন পিয়াকে কেন দূর দেশে পাঠাবেন না? এ উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতাকে ব্যাখ্যা করো। ২+৩=৫


উত্তর:-  
জয় শ্রীরাধিকার অচ্ছেদ্যবন্ধনে শ্রীকৃষ্ণ কবি বিদ্যাপতির লেখা 'ভাব সম্মিলন' কবিতা থেকে সংকলিত উদ্ধৃতাংশে শ্রীমতী রাধিকা তাঁর প্রাণপ্রিয় মাধব অর্থাৎ শ্রীকৃয়কে কোনো কিছুর বিনিময়ে দূরদেশে পাঠাবেন না। শ্রীকৃষ্ণের অদর্শনজনিত দীর্ঘ বিরহের পর মানস কল্পনায় আপন দেহমন্দিরে প্রিয়তমকে পেয়ে তিনি খুবই আত্মতৃপ্ত। তাই এ সময় কেউ যদি আঁচল ভরে তাঁকে মহামূল্যবান রত্নসামগ্রীও দেয়, তাও তিনি কোনোভাবেই তাঁর প্রাণধন শ্রীকৃষ্ণকে কাছছাড়া করবেন না। এখানে শ্রীমতী রাধিকার গভীর আত্মতৃপ্তির সুর ধ্বনিত হয়েছে।

■ নিবিড় প্রেম: 
শ্রীমতী রাধিকা একদা কৃষ্ণসান্নিধ্যে 'কত মধুযামিনী' কাটিয়েছেন। 'তনু-মন-প্রাণ' দিয়ে কৃষ্ণকে ভালোবেসেছেন। কৃত্বের জন্য 'কলঙ্কের হার গলায়' পরতেও রাজি হয়েছেন। অতঃপর কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে গেলে রাধিকা বিরহের মর্ম যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন। এই বিরহভাবের আবেশে মানসনয়নে তিনি কৃষ্ণের দর্শন পান এবং আপন দেহমন্দিরে কল্পনায় কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হয়ে গভীর আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। কৃষ্ণকে কাছে পেয়ে তিনি এতটাই পরিতৃপ্ত যে, কেউ যদি তাঁকে আঁচল ভরে মহামূল্যবান রত্নসামগ্রী দান করে কৃষ্ণকে চান, তাহলেও তিনি কখনোই কৃষ্ণকে তাঁর সঙ্গছাড়া করবেন না। এখানে শ্রীমতী রাধিকার কৃষ্ণের প্রতি তীব্র ভালোবাসার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।


  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার তৃতীয় অধ্যায় SAQ
  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা নতুন সিলেবাস দ্বিতীয় সেমিস্টার 
  • ক্লাস 11 বাংলা অধ্যায় 3 প্রশ্ন উত্তর
  • Class 11 Bengali New syllabus in bengali west bengal board
  • Class 11 2nd semester Bengali New syllabus WB


একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, তৃতীয় অধ্যায়, ভাব সম্মিলন - বিদ্যাপতি প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 2nd semester, Third Chapter Vab Sommilon - Biddapoti Questions and Answers | Class XI, Semester II, Bengali, Third Chapter Questions and Answers 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!